হাতে পেয়েই গোগ্রাসে গিলে ফেললাম আরামবাগ টাইমস শারদ অর্ঘ্য-১৪২৮গতানুগতিকতা ছাড়িয়ে যাবার অনন্য প্রচেষ্টা সমস্ত পত্রিকা জুড়ে ছড়ানো।এই গভীর সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে ও এমন একটি পূজা সম্ভার ছাপার অক্ষরে প্রকাশ তাও মফস্বলের আয় এর অস্তিত্ব হীন ক্ষেত্রে রীতিমতো দুঃসাহসিক। হয়তো নিদারুণ নেশা গ্রস্ততার প্রভাবও বটে।সময়োপযোগী প্রথম চমক অরুণাভ বেরার তুলিতে জ্যান্ত দুর্গার বেরং ও রংয়ের মিশ্রিত প্রচ্ছদ, অপূর্ব ব্যাঞ্জনাময়।পত্রিকা পরিচয় পৃষ্ঠায় বাংলা ঘরাণার বাঙালি মা দুগ্গাতে বেচারি বৈরাগী সরস্বতী,ন্যাটা কাত্তিক,বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু গণসা আর চিরায়ত অপুর দিদি লক্ষীকে নিয়ে পৃষ্ঠা বেশ মজাদার।
প্রকাশিত প্রবন্ধ রয়েছে অর্ধেকের বেশি পৃষ্ঠা জুড়ে।তবে খুব সমৃদ্ধ প্রবন্ধের প্রবেশ ঘটেনি।এরই মধ্যে হাসি দাসের ধর্ম কথা বেশ জমজমাট।আরও কয়েকটি প্রবন্ধ অপেক্ষাকৃত সমৃদ্ধ। সিদ্ধার্থ সিংহের বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ কথা,তন্ময় ঘোষের বুদ্ধদেব গুহ কে নিয়ে প্রবন্ধ, বিভাংশু দত্তের বাংলা কাবুল সম্পর্ক কথা মান্যতা পেয়েছে। যদিও তা আমার নিতান্তই ব্যক্তিগত ধারণার প্রকাশ।
আত্ম হত্যার আগে অনু গল্পের মতো, তবে কাব্যিক বিন্যাসে অনবদ্য। দৃষ্টি দিয়ে প্রাণের পরশ তেও এক উত্তোরণের স্বাদ বিশেষ ভালোলাগা আদায় করে নিয়েছে। অপেক্ষা র বিন্যাস ও প্রেক্ষাপট ভাবনাও মৌলিকত্বের দাবিদার। শেষচিঠি ও বেশ ভালো লেগেছে বাস্তবের কিছু অনুল্লিখিত চরিত্রের আত্মপ্রকাশে এবং গভীর ও সুক্ষতর জীবন বোধের বিন্যাসে। চন্দ্রমুখীর ডলু ভলু চিরন্তন স্নেহ মণ্ডিত এক মাতৃত্বের প্রেক্ষাপটে চিত্রিত। পূনর্জন্ম তেও অনবদ্য বাস্তব চিন্তা ও চেতনার প্রতিচ্ছবি। মন কেড়েছে হতভাগ্যের ডায়েরী ডুলি । বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই এমনই হয়। বেশ মজাদার গল্প সম্ভার।
অনেক গুলি কবিতা তেই মহামারীর প্রভাব, যা একান্তই বাস্তব সময়ের প্রতিচ্ছবি। আধুনিক কবিতার দুর্বোধ্যতার ধোঁয়াশা আমাকে আচ্ছন্ন করেনি এমন বলব না। আবার দু এক খানা নিজের বোধে অসংলগ্ন লাগেনি এমন ও নয়। এ ত্রুটি নিতান্তই আমার। কেননা রচণার সময় কবির নিজস্ব ভাবনার দৃষ্টি কোণ টি সবসময় আমার চোখে পড়বে তার নিশ্চয়তা কোথায়। একটা বিশেষ দিক নজরে পড়লো, ভালো লাগলো একই কবির একাধিক কবিতা পৃষ্ঠা জুড়ে, বেশ স্বতন্ত্রতার দাবিদার।
সবমিলিয়ে বিশেষ বৈচিত্র রয়েছে পত্রিকার বিন্যাসে।প্রবন্ধ গল্প ক্রমে কাব্যিক অন্ত ভাবনায় রুঢ় বাস্তব থেকে ক্রমশ সাহিত্য রসের গূঢ়তর সমৃদ্ধির বাস্তবের দিকে পা বাড়ানোর মুন্সিয়ানা পত্রিকা কে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। পত্রিকা সম্পাদকীয় তে অনন্য সাহসী পদচারনা রীতিমতো শ্রদ্ধা আদায় করে নিয়েছে। পরিশেষে অকুণ্ঠ প্রশংসা শুভেচ্ছা ও নমস্কার রইলো।
গৌতম চক্রবর্তী (শিক্ষারত্ন২০১৬,পঃ বঃ সরকার)
