Arambagh Times
কাউকে ছাড়ে না


সব ধর্মে , সাহিত্যে গানে, ছায়াছবিতে মোমবাতির সমুজ্জ্বল উপস্থিতি । কোথায় নেই ?

জন্মদিনে মোমবাতি জ্বালানো একটা  পরিচিত প্রথা । যার  যততম জন্মদিন  সে ততগুলো মোমবাতি ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেবে ।
শোকের মিছিলে, প্রতিবাদের মৌন মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে মোমবাতি প্রজ্বলিত অবস্থায় থাকে ।  জ্বলন্ত  মোমবাতিই শোক ও প্রতিবাদ প্রকাশের  ভাষা ও প্রতীক  ।
 হিন্দু ধর্মে  কালীপুজোর রাতে  মোমবাতি দিয়ে বাড়ি সাজানো হয় । একেই বলে দীপাবলি ।  

খ্রিস্ট ধর্মের লোকেরা বড়দিনের রাতে মোমবাতি জ্বালায় । অরুন্ধতী দেবীর ‘ ছুটি’ ছবিতে অমলরূপী মৃণাল মুখোপাধ্যায় ও ভ্রমররূপী নন্দিনী মালিয়া বড়দিনের আলোভরা রাতে দ্বৈতকণ্ঠে গাইছেন ‘ এই লভিনু সঙ্গ তব সুন্দর হে সুন্দর ‘ । নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছিলেন চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় ও প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
মুসলিম সম্প্রদায়ের শবেবরাতের রাতে মোমবাতি জ্বালানো হয় । কাজি নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় লিখেছেন ,
‘ এল এল শবেবরাত
তোরা জ্বালরে ঘরে বাতি।
হোক রওশন মুসলিম জাহানের
অন্ধকার রাতি’ ।
মোমের পুতুলকে তো স্মরণীয় করে রেখেছেন নজরুল তাঁর এক বিখ্যাত গানে ,
‘ মোমের পুতুল মমির দেশের মেয়ে নেচে যায় ‘ ।
ইরাকে ছোট ছোট ছেলেদের হাতে মোমবাতি দেওয়ার একটা রেওয়াজ আছে । ছোটরা সেই মোমবাতি পড়শিদের কাছে বিলিয়ে দেয় ।
কী গ্রামে, কী শহরে মোমবাতি জ্বালানো একটা জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কে কটা মোমবাতি জ্বালাতে পারে, এটাই প্রতিযোগিতার বিষয় ।
সাহিত্যে ‘মোমবাতি’ অনেকবারই এসেছে । সেই কবে কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার রূপক অর্থে মোমবাতির অপব্যবহার নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলেন । যেটা ছাত্রদের বাংলা পরীক্ষায় সম্প্রসারণ করতে বলা হয়।
বহুশ্রুত সেই কবিতাটা হল ,
‘ যে জন দিবসে মনের হরষে
জ্বালায় মোমের বাতি
আশু গৃহে তার দেখিবে না আর
নিশীথে প্রদীপ ভাতি’ ।
সুকুমার রায়ের অন্তত তিনটে ছড়া- কবিতায় ‘ মোমবাতি’ পাওয়া যায় ।
‘ ডানপিঠে’ ছড়ায় পাই
‘ একটার দাঁত নেই জিভ দিয়ে ঘষে,
একমনে মোমবাতি দেশলাই চোষে ‘ ।
‘ ট্যাঁশ গোরু’ ছড়াতে মোমবাতিকে খাদ্য হিসেবে
দেখানো হয়েছে ।
‘ রুচি নাই আমিষেতে, রুচি নাই পায়েসে ।
সাবানের সুপ আর মোমবাতি খায় সে ‘ ।
সুকুমার রায়ের ‘ আদুরে পুতুল’ কবিতায় আছে,
‘ মোমের পুতুল ঘুমিয়ে থাকুক
দাঁত মেলে আর চুল খুলে ‘ ।
বাংলা গানেও মোমবাতির ছড়াছড়ি ।
গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় নিজের সুরে
‘ দেয়ানেয়া’ ছবিতে শ্যামল মিত্র গেয়েছেন,
‘ যে আঁখি হয় না খুশি আকাশভরা তারা দেখে
সেই হাসে কাচের ঝাড়ে মোমের বাতি জ্বেলে রেখে’
সুনীলবরণের কথায় সুধীন দাশগুপ্তের সুরে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা জনপ্রিয় গান আছে
‘ প্রেম শুধু এক মোমবাতি ‘ ।
নচিকেতা ঘোষের সুরে আরতি মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া সেই গান,
‘ এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে
এসো না গল্প করি ‘ ।
এ ছাড়া নজরুলের একটা কবিতা ও গানের কথা তো গোড়াতেই বলেছি ।
মোমবাতি নিয়ে দুটো বাংলা ছবিও আছে ।
উত্তমকুমার ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ১৯৬৪-র ছবি ‘ মোমের আলো’ ।
১৯৭৬ এ মহাশ্বেতা দেবীর কাহিনি অবলম্বনে যাত্রিক গৌষ্ঠী ‘ মোমবাতি’ নামে এক মহানায়কচিত্র পরিচালনা করে ।
শেষে মোমবাতি জ্বালিয়ে বলি,
‘এ জীবন পুণ্য করো দহনদানে ‘ ।

             ______

,,


Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.