বাঁকুড়াঃ প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে আর্থিক তছরুপের অভিযোগে গ্রেফতার। তার বাড়ি থেকে সকালেই গ্রেফতার করে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের আর্থিক তছরুপ, বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা রুজু করেছে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ । আজ প্রাক্তন মন্ত্রীকে আর্থিক তছরুপের অভিযোগে মামলা রুজু করেছে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ এবং বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ।
পুরসভায় ৩০ বছর চেয়ারম্যান পদে ছিলেন তিনি। বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় সংবিধানের জামিন অযোগ্য ৪০৯ ধারায় সরকারি অর্থ তছরুপ করা সহ একাধিক ধারায় মামলা রজু করে রবিবার বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে তোলে। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ওই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন এবং এই গ্রেফতার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে সাফাই গেয়েছেন পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান।
শ্যামবাবুর রাজনৈতিক জীবনের উত্থান জাতীয় কংগ্রেসের হাত ধরে। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করার পর পুরসভার চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পুরসভার ১৯ জন কাউন্সিলরদের নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১১সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের ময়দানে নেমে জয়লাভ করেন। সেবারই তিনি প্রথমে রাজ্যের আবাসন মন্ত্রী ও পরে বস্ত্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রবল মোদি ঝড়ে ফের তিনি রাজনৈতিক পালাবদল করে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন। যদিও বিষ্ণুপুর বিজেপি তাঁকে নেতা হিসাবে কোনো দিনও মেনে নেয়নি। তাই বিজেপিতে ঠাঁই না পেয়ে বিপুল ভোটে তৃণমূলের প্রত্যাবর্তনের পর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ফের তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা করেন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুরে একটি সরকারি কর্মসূচিতে এলে সেখানে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেন। যদিও সে যাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে দেখা করা তো দূরস্থ কোনো বার্তাও দেননি। এই পালা বদল পর্বের মধ্যেই তিনি বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যানের পদটিও হারান। সরকারি নির্দেশে শ্যামবাবুকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে তাঁরই ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়।
তবে আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদিন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে হাজির করা হলে বিচারক পুলিশের অনুরোধে ঘটনার তদন্তের স্বার্থে তাঁকে ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও আদালতের রায় শোনার পর এই বিষয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নিজে কোনো মুখ খোলেন নি।