আবারও একটা স্বাধীনতা দিবস। সেই থোড় বড়ি খাড়া ভাষন চলবে মঞ্চে মঞ্চে। রক্তদান শিবির হবে কোথাও কোথাও। কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশাত্মবোধক গান বাজবে। নাচ গান হবে। পশ্চিমবঙ্গ হলে দিঘা, মন্দারমনিতে ভিড় জমবে, এখন বন্যার মরশুম,তাই কেউ বা কোনো সংস্থা ত্রান বিতরণ করতে যাবে। মিডিয়া এর প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত দৌড়বে স্বাধীনতা দিবস কোথায় কারা কিভাবে পালন করছে সংবাদ সংগ্রহের দায় থেকেই। আবার আসছে বছর আবার হবে আর একটা স্বাধীনতা দিবস।
কিন্তু আমরা কি সত্যি অর্থেই স্বাধীন? কোন্ দিক থেকে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি? আমাদের সংবিধানে মৌলিক অধিকার বলে যে কথা আছে বাস্তবিকই কি আমরা সেই মৌলিক অধিকার পাই? বাক স্বাধীনতা, প্রকৃত অর্থে বাক স্বাধীনতা আমাদের আছে? আমরা সাধারণ মানুষজন এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বা পৌর কাউন্সিলর এর অন্যায়, দুর্নীতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর দুঃসাহস দেখালে তার পরিনাম কি হবে বা হতে পারে কল্পনাও করতে পারি না, সরকারের মুল্যায়ন দুরের কথা এতটুকু সমালোচনা করার পরিনাম ভয়ঙ্কর হতে পারে, খোদ সাংবাদিকরাই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর পছন্দের প্রশ্ন না করলে কি হয় মিডিয়ার দৌলতে কারো অজানা নয়। মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত যেতে হবে না, স্থানিয় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, পৌরসভার কোনো সমালোচনা করার দুঃসাহস দেখালে তার বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হতে পারে, বিজ্ঞাপনের প্রাপ্য মূল্য নাও দেয়া হতে পারে। এলাকায় বসবাস করলে বিভিন্ন সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হতেই পারে। আর একেবারেই অপছন্দের তালিকায় থাকলে যেকোনো কেসে ফাঁসিয়ে চরম হেনস্থাও করা হতে পারে। পরাধীনতার আরও একটা নমুনা, এখানে বিরোধী দল করা মহা অপরাধ। নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হতে পারে, ইচ্ছা মাফিক কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়া হতে পারে, ঘরছাড়া করা হতে পারে, মারধোর, ঘর ভাঙচুর তো বাড়তি পাওনা। এটা এখানে ট্রাডিশনের মতো চলে আসছে। বোঝাই যায় না, আদৌ সংবিধানে বিরোধী দল করার স্বাধীনতা দেওয়া আছে কি না। অতি সম্প্রতি জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ির এক এমবিএ পাশ ব্যাঙ্ক কর্মচারী শুধু মাত্র বিজেপি করার “অপরাধে” আজ ৩০২ সহ এগারোটা মিথ্যা কেসে ফেঁসে জেল খেটে চাকরি হারিয়ে মুম্বাই এ ৩০০ টাকা রোজে ডেলি লেবারের কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন একটি মিডিয়া মারফত। তাঁর কাছে এই ভারতবর্ষ স্বাধীন ভারতবর্ষ! বানভাসি বহু এলাকায় বন্যাদুর্গত বহু মানুষ শুধু মাত্র বিজেপি করার জন্য শাসকদলের কাছথেকে ত্রান পাননি বলে অভিযোগ করেন। চরম বিপদেও ক্ষুধার্তদের রং দেখে ত্রান বিতরণ করা হবে! আমি এখানে বিজেপির ঢাক পেটাচ্ছিনা। বাম আমলে তৃণমূল ঠিক একই অভিযোগ করতো। আসলে চেয়ারে রং বদলায়, সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলায় না।
আমরা শিক্ষিত হতে পারি, কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরির আশা করতে পারি না। কবে উনিশশো সাতচল্লিশ সালের এক পনেরোই অগাষ্টে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করেছিলো। আজও সংরক্ষণ এর আওতায় এস সি, এস টি, ও বি সি রা অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে চলেছেন, জেনারেল কাস্টরা নিষ্পেষিত হচ্ছেন সব দিক থেকেই। বর্তমানে ষাট শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়েছে। জেনারেল কাস্টরা যতই নিজের যোগ্যতায় শিক্ষা অর্জন করুন, সংরক্ষণের যাঁতাকলে তাঁরা দিশাহারা। এমনকি দুঃস্থ অসহায় জেনারেল কাস্টের শিক্ষিত, মেধাবী ছাত্র চাকরির পরীক্ষায় ফরম ফিলাপ করতে পারেন না, যেহেতু জেনারেল কাস্ট তাই বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় মোটা অংকের টাকা গচ্চা দিয়ে ফরম ফিলাপ করার আর্থিক ক্ষমতা নেই। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ সংরক্ষণ সিস্টেম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে, কিন্তু ভোট রাজনীতি করতে গিয়ে ভারতবর্ষে সংরক্ষণ বাড়িয়ে ষাট শতাংশ করে দেওয়া হয়। অথচ আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা সকল শ্রেনীর জন্য সংরক্ষণ করা হবে এটাই প্রত্যাশা ছিলো। জাতপাত এই দেশে একটা অভিশাপ। কিসের উচ্চ বর্ন, যদি মনের দিক থেকে ঘৃন্য নীচতা থাকে! কিসের জাত্যাভিমান, যদি নিম্ন বর্ণের মানুষকে সমদৃষ্টিতে দেখার মানসিকতা অর্জন ও সুশিক্ষা না থাকে? সংবিধানে কোথায় আছে নিম্ন বর্ণের মানুষের শিক্ষিত হওয়ার, সমাজের সর্বস্তরে নিজ যোগ্যতায় অংশগ্রহণ করার অধিকার নেই? এই আমাদের স্বাধীন ভারতবর্ষ! স্বাধীনতা মানে স্বল্পবাস হওয়ার স্বাধীনতা ! হায় রে! এই আমাদের স্বামী বিবেকানন্দের ভারতবর্ষ! বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়ের, সারদা দেবী, নিবেদিতার ভারতবর্ষ! এখানে এখনও নারীদের যোগ্যতাকে কর্মক্ষেত্রে সম্মান দেওয়া হয় না। দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।
এখানে সরকারি হাসপাতালে সুচিকিৎসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সুপারিশ থাকলে অবশ্যই অন্য কথা। অর্থ থাকলে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হয়তোবা মিলতে পারে। মানুষ ধারদেনা করে একটু ভালো চিকিৎসা পেতে তাই ছোটেন দক্ষিনের রাজ্য গুলিতে। আসলে বিভিন্ন মিডিয়ায় টক শো তে অনেক চিকিৎসক যে উদারতার বানী বর্ষন করেন কর্মক্ষেত্রে মানে চেম্বার ও নার্সিং হোমে প্রবেশের সাথে সাথেই সম্ভবত তা ভুলে যান। ভুলে যান তাঁর চিকিৎসক হওয়ার পিছনে তাঁর পরিবারের উপার্জিত অর্থের পাশাপাশি আম জনতার অর্থও আছে। সুচিকিৎসা পাওয়া টাও কিন্তু মৌলিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। ব্যাক্ষা বৃথা। শত্রু বৃদ্ধি পাবে। এক কথায় একটি ব্যাক্তির ভিক্ষা নয়, নিজ যোগ্যতায় কর্মের অধিকার প্রয়োজন।যাতে নিজ উপার্জিত অর্থের বিনিময়ে খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হন। ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যে সরকার সাধারণ মানুষজন নির্বাচন করেছেন নিঃসংকোচে সেই সরকারের ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করতে পারেন। সেটাই হবে পুর্ন স্বাধীনতা। আর এটাও ঠিক, সেই স্বাধীনতা দুঃস্বপ্ন।
