বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : ২০১১-তে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যের সব থেকে বড় যে কেলেঙ্কারি সামনে এসেছিল তা হল সারদা চিটফান্ড। ২০১৩-তে এই কেলেঙ্কারি সামনে এলেও, তার সমাধান এখনও অধরা। বিধানসভা নির্বাচনের আগে জেল থেকে বসে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠি নিয়ে শোরগোল হয়েছিল। এবার সুদীপ্ত সেনের তৎকালীন সহযোগী মনোজ নাগেলের অভিযোগে একমাত্র ‘স্যার’ -এর দিকে।
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মনোজ নাগেল জানিয়েছেন, তিনিই সারদা মামলায় প্রথম গ্রেফতার হন। তিনি বলেছেন, যখন সুদীপ্ত সেনকে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন সবাই আন্দোলনমুখী। আলোচনা করে আবেদনপত্র লিখে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি যান। ওখান থেকে মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁকে দেখা করতে বলা হয়। ওখান থেকে রাজীব কুমার ফোন করেন। মুকুলদার সঙ্গে কথা বলেই তিনি যান রাজীব কুমারের কাছে। মনোজের দাবি মুকুল রায় তাঁকে ভাল ছেলে বলে সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
মনোজ নাগেল অভিযোগ করেছেন, মুকুল রায় সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে ৮০ কোটি টাকা কেড়ে নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে একজনকে দেওয়া টাকা সম্পর্কে সুদীপ্ত সেন বলেন নি। সেই ব্যক্তি হলেন মুকুল রায়। তিনি বলেন, তিনি (মনোজ নাগেল) সুদীপ্ত সেনকে একদিনের একটা অ্যামাউন্ট মনে করাতে চান। গাড়িতে করে দিল্লিতে সেই টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন নিজে। সেন-এর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেই টাকা মুকুল রায় নিয়ে নিয়েছিলেন। মনোজের দাবি–সুদীপ্ত সেন সেই দুঃখের কথা তাঁর (মনোজ) কাছেও বলেছিলেন। একবারেই সুদীপ্ত সেন আশি কোটি দিয়েছিলেন, তবে বাকি বছরে আর কী দিয়েছিলেন তা তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন। সেই টাকা কোথায় গেল প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। স্যালারি পেয়ে গেলেই ফেরত দিয়ে দেবো, তা বললেই কি মুক্তি, প্রশ্ন করেছেন একদা সুদীপ্ত সেনের সহযোগী। তিনি আরও বলেছেন, মা সারদার নাম করে চিটিং করা হয়েছে। মনোজ নাগেল বলেন, সারদায় কাজ করে তিনি নাজেহাল। এখন থালা ধুয়ে খান। সুদীপ্ত সেন তাঁকে কবে ডিরেক্টর বানিয়েছেন, আর কবে জিএম, তা তিনি জানতেই পারেননি !
মনোজ নাগেল সংবাদ মাধ্যমের সামনে দাবি করেছেন, বিষয়টি তিনি সিবিআই-এর কাছে জানিয়েছিলেন। তবে ভোটের আগে বিষয়টি সামনে আনেননি তিনি। মনোজ বলেন, দরকারে তিনি গোপন জবানবন্দি দেবেন। এ ব্যাপারে অনেকেই জানেন বলে দাবি করেছেন মনোজ। তবে সবার নিরাপত্তার দাবিও করেছেন তিনি। সারদা তদন্ত দ্রুত শেষ করার দাবি তুলেছেন এই মামলায় প্রথম গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি। মনোজ নাগেল বলেছেন, সুদীপ্ত সেন একজনের সঙ্গে কথা বললেও, ফোন আসার সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াতেন। তাঁর আরও দাবি, আর সেই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁকে সুদীপ্ত সেন স্যার বলতেন, তিনি হলেন মুকুল রায়। তাঁর স্যারের স্যার, গুরুর গুরু ‘মহাগুরু’। মনোজের প্রশ্ন–এই মামলায় মুকুল রায় কেন এখনও বাইরে থাকবেন? তিনি বলেছেন, আইনের প্রতি ভরসা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি আর পেরে উঠছেন না।
ভোটের আগে জেল থেকে লেখা সুদীপ্ত সেনের একটি ‘চিঠি’ প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই চিঠিতে সুদীপ্ত সেন বিজেপি, তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেসের কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। যার বিষয় বস্তু তদন্তের জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছিল ব্যাঙ্কশাল আদালত।
এখন প্রশ্ন হল, মনোজ নাগেলের অভিযোগের ভিত্তিতে কুণাল ঘোষ শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি মুকুল রায়কেও গ্রেপ্তারের দাবিতে সোচ্চার হবেন কিনা !!
