Arambagh Times
কাউকে ছাড়ে না
rammohan

আরামবাগ মহকুমা ছাড়িয়ে অন্যত্র পা রাখলেই আজও আমাদের পরিচিতির প্রধান হাতিয়ার রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, আর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণদেব। আমাদের অহংকারের শেষ নেই। কিন্তু এই তিন প্রাতঃস্মরণীয়দের জন্মধন্য এই মাটির প্রতি, এই মহৎপ্রাণ দের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা কি জন্ম আর প্রয়ান দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
খানাকুলে রাজা‌ রামমোহন রায় জন্মেছিলেন এ আর নতুন কথা কি, সবাই জানেন। তাঁর জন্মভিটা, আমবাগান, তাঁর নামাঙ্কিত মেমোরিয়াল হল কি সত্যিই ভালো আছে? সত্যিই কি বাইরে থেকে কেউ এখানে এলে গর্ব ভরে, মাথা উঁচু করে দেখানোর মতো কিছু অবশিষ্ট আছে? সেই বাম আমল থেকে আজও ক্ষমতার হাতবদল হলেও খানাকুলের ভাগের কোনো পরিবর্তন হয়নি। কত বছর ধরে ন্যায্য দাবি এলাকাটিকে পর্যটনের উপযুক্ত এলাকায় রূপান্তরিত করা হোক। না, বাম বা ডান কোনো শাসকদলের প্রতিনিধিই বলেননি করবেন না। সে কত প্রতিশ্রুতি! কত‌সব পরিকল্পনার কথা শোনানো হলো। এমনকি এখানে রবীন্দ্রভবনও হবে, তার জন্য আর্থিক অনুমোদন হয়েছিল বলেও শোনা যায়। মেমোরিয়াল হল, জন্মভিটা আমবাগান সব স-ব ঢেলে সাজানোর স্বপ্ন দেখানো হলো, বাম আমলে তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের মন্ত্রী অঞ্জন বেরা, তৃনমূল সাংসদ, তৃনমূলের বিধায়ক যথাক্রমে পারভেজ রহমান, ডাঃ এম নুরুজ্জামান, ইকবাল আহমেদ সবাই এমন ভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেন এই লাখ লাখ টাকা অনুমোদন হয়ে গেল, এই কাজ শুরু হয়ে গেল।‌ রত্নাবলী আর মুন্ডেশ্বরী নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে, কেউ কথা রাখেনি। হ্যা, কেউ কথা রাখেনা। রাজা রামমোহন রায়ের নামকে ঢাল করে ‌একটা‌ মেলা হয় বটে। তাতে সংস্কৃতির নাম মান কতটা সুরক্ষিত থাকে বিস্তর সমালোচনা আছে, ক্ষোভ আছে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের মধ্যে। রামমোহনের আমবাগান এখন পার্কে পরিনত। সেখানে কেয়ারটেকার থাকলেও সর্বত্র আবর্জনা অপরিষ্কার ল্যাম্পপোস্ট হয়তো ছিল কখনো, এখন স্মৃতিটুকু সম্বল। পানীয় জলের জন্য টিউবওয়েল আছে, কিন্তু অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এখন লক ডাউন, নাহলে এখানে জোড়ায় জোড়ায় যেভাবে কিশোর যুব বয়সের ছেলেমেয়েরা বসে থাকে এলাকার প্রৌঢ় ও প্রবীন বয়সী নাগরিকরা বৈকালিক ভ্রমনে আসতে সংকোচ বোধ করেন। মেমোরিয়াল হলের অবস্থা খুবই করুন। এখানে গরু ছাগলের চারন ভুমি। কবে রাজা রামমোহন রায়ের জন্ম বা প্রয়ান দিবস সেসব মনে রাখতে হয় বোধহয় আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক ও লেখক দেবাশিস শেঠ, শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক ড. পরেশচন্দ্র দাস, সমাজসেবী বাসুদেব বাবুদের। ঐ দুটি দিন সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদের পুরোধা, বিশ্বের গর্ব, এলাকার ভুমি পুত্র রাজা রামমোহন রায়ের মর্মর মূর্তিকে কিছুটা হলেও পরিস্কার করা হয়, কিছু মালা জোটে আর আবার‌ দাবি ওঠে, যথারীতি প্রতিশ্রুতি‌ দেন আগত পঞ্চায়েতের বা বিধায়ক বা সাংসদের প্রতিনিধি দলের কেউ কেউ। আসলে এলাকার মানুষজনও অভ্যস্থ হয়ে গেছেন ধারাবাহিক এই প্রক্রিয়ায়। জোরালো দাবিও নেই। অনেকটাই এরকম, বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাজাতে গিয়ে শাসকদলের রক্তচক্ষুর শিকার হওয়ার থেকে এই বেশ ভালো আছি।
চলুন আমরা দেখাবো রাজা রামমোহন রায়ের জন্ম ভিটা, আমবাগান ও মেমোরিয়াল হলের দুরবস্থার সেই চিত্র।

তন্ময় পলিতার রিপোর্ট, আরামবাগ টাইমস

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.