Arambagh Times
কাউকে ছাড়ে না

রাজা রামমোহন রায়ের আন্দোলনের ফলে নাকি সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছিলো। নাকি শব্দ টা এই জন্যই ব্যবহার করতে হলো, আদৌ কতটা বিলুপ্ত হয়েছে বা আদপেও হয়েছে কি না প্রশ্ন আছেই।
বিদ্যাসাগর মহাশয়, ভগিনী নিবেদিতা এঁরা নারীদের শিক্ষা দানের জন্য নিজেদের জীবনপাত করে ছিলেন, বহু বিবাহ রোধে, বিধবা বিবাহ প্রথা চালু করতে, নারী স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম তখনও মুষ্টিমেয় কিছু স্মরনীয় বরণীয় ব্যাক্তিত্ব কঠোর আন্দোলন করে ছিলেন, আজও সেই আন্দোলন অব্যাহত। আমাদের ভারতবর্ষে প্রাতঃস্মরণীয় গার্গী, মৈত্রেয়ী, লোপামুদ্রারা যেমন ছিলেন তেমনি এই ভারতবর্ষে কল্পনা চাওলা থেকে শুরু করে ইন্দিরা গান্ধীদের বিচরনও প্রাসঙ্গিক। কিন্তু সেটাও তো হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র। এঁদের উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে কিভাবে প্রমান করা যাবে উন্নত ভারতবর্ষ? যে দেশে নারী দিবস পালিত হয়, মাতৃ দিবস পালিত হয় সেই দেশে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরে অহরহ শিক্ষিত অশিক্ষিত পরিবারে কত নারী সংসারে, কর্মজীবন লাঞ্ছিত, নিগৃহীত, অত্যাচারিত সরকার তার খবর আদৌ রাখে? পরিবেশ কর্মীরা রাখেন? নারীবাদী সংগঠন রাখে? বরং এসব নিয়ে গালভরা বক্তব্য রাখেন, হাততালি কুড়িয়ে দায় সারেন!
আজও জাতপাত, সম্মানরক্ষায় সালিশি, নারকীয় অত্যাচার, খুন চলে আসছে। রূপ কানোয়ার একটাই উদাহরণ নয়। মিডিয়ার দৌলতে যেটুকু খবর সামনে আসতে পারে তাতেই গা গুলিয়ে ওঠে — এ কোন সমাজ! এ কোন ভোট সর্বস্ব, গদিলোভি শাসকদল, বিরোধী রাজনৈতিক দল, এ কোন পুলিশ প্রশাসন, সর্বোপরি এ কোন আইন মা আজও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগে জাতপাতের হিংস্রতা বন্ধ করতে অক্ষম, সম্মান রক্ষার নামে চলে নৃশংস ভাবে খুন, এসব কঠোর ভাবে রোধ, দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না! মহারাষ্ট্রে নান্দেদ জেলায় একটি পরিবার তাদের সম্মান রক্ষার নামে বাড়ির ডাক্তারি পড়ুয়া কন্যা সন্তানকে পাশেই মাঠে ডেকে নিয়ে গিয়ে নিজের বাবা,দাদা, কাকা সহ আরও পাঁচ আত্মীয় মিলে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে খালে ভাসিয়ে দেয়। সন্তানের অপরাধ সে গ্রামেরই একটি ছেলেকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। এতে নাকি পরিবারের “মান” চলে গেছে। আর মান তার জন্য গেছে তার আর বাঁচার অধিকার নেই। এটা কি সংবিধান সম্মত আইন? যদি না হয় তাহলে কেন সেইসব খুনিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না? কেন এখনো পর্যন্ত অবলীলায় ডাইনী ঘোষণা করে নির্মম হত্যা করা হয়? কিসের উন্নত সমাজ, উন্নত দেশের বড়াই যেখানে নারীদের নিরাপত্তার কথা শুধু মাত্র খাতায় কলমেই!

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.