Arambagh Times
কাউকে ছাড়ে না

একটা বছর অনেক জ্বালা যন্ত্রণা দিয়ে বিদায় নিলো । সে সারাক্ষণ আমাদের সঙ্গে ঝগড়া করতে করতে গেলো, কখনো কোভিডের ভয় দেখিয়ে ঘরে বন্দী করে রেখে । তখন মনে হতো পথহারা,কর্মহারা হয়ে যেন অনন্ত জলরাশির মধ্যে কোনো দ্বীপে আছি । সে কেবল কর্মনাশা, আতঙ্কবাদী হিসাবে মনে থাকবে। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর ও শেষ হতে চলেছে । শুরু হয় বড় দিনের পর্ব । ২৫ শে ডিসেম্বর আসলে বড়দিন নয়, ক্ষুদ্রতম দিনের পরের দিন অর্থাৎ ওই দিন থেকে একটু একটু করে দিন বড় হতে শুরু করে । ওই দিন থেকে বড় দিনের সূচনা হয় বলে বড় দিন কিন্তু বৃহত্তম দিন নয় ।( Commencing a big day but not the biggest day ) বড় দিন মানে মহান প্রেমিক যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন । সারা খ্রীষ্টান দুনিয়ার সাড়ম্বরে পালিত হয় তার জন্ম দিন চার্চে -চার্চে -গানে- সম্মরণে- ভক্তিতে- শ্রদ্ধায় । আলোর রোশনা পরীর মতো আমাদের মন অসাম্প্রদায়িক হয়ে উড়ে বেড়ায়। ওই দিন আমরাও খ্রীষ্টান । সারা বিশ্ব এক হয়ে যায়। মনুষ্যত্বের কোনো ভেদাভেদ নেই। মনে হয় সারা বিশ্বে একটাই মানব সত্ত্বা বিরাজ করছে। তারপর ২৫শে ডিসেম্বর থেকে ফার্ষ্ট জানুয়ারী। আনন্দের চূড়ান্ত পর্যায়। আলোর রোশনা, বাজি পোড়ানো, চার্চ থেকে ঘন্টার ধ্বনি- বর্ষ বরণ যাকে বলে।
এখানে বলে রাখা ভালো বাঙালির পয়লা বৈশাখের মাধুর্য্যের সঙ্গে ফার্ষ্ট জানুয়ারীর কখনো তুলনা করবেন না । ফার্ষ্ট জানুয়ারী শুধু আনন্দের জন্যে বর্ষ বরণ । এখানে সুন্দর জীবনের কোন অঙ্গীকার থাকে না। থাকে না কোনো মহান উদ্দেশ্য। দিনটা আসে কেবল আনন্দ করার জন্যে । তাই আনন্দের মধ্যে দিয়ে দিনটা পালিত হয় কেবল । পয়লা বৈশাখ কিন্তু তা নয় ‌। নতুন জীবনের শপথ থাকে। তাই ওই দিনটা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয় ,হৈ-হুল্লোড় করে নয় । পয়লা বৈশাখ অর্থাৎ প্রতিপদ তীথিতে ঝারা দেওয়া শুরু হয় অর্থাৎ তুলসী গাছে জল দেওয়া হয়। একটি গাছ -একটি প্রাণের বীজমন্ত্র লুকিয়ে আছে এখানে। ওই দিন গোমাতা কে পুজো করার উদ্দেশ্যে পায়েস ভোগ করার প্রচলিত রীতি আছে। পশুর প্রেম এবং পশু সংরক্ষণ এই রীতি পালনের বহিঃপ্রকাশ বলা যায়। তৃতীয় রীতি হচ্ছে বসুন্ধরা মাতৃগর্ভা মনে করে ওই দিন সকালে মাঠে খড়ের আঁটি জ্বালানো হয় ‌যা বসুন্ধরা সম্মেলনের সূচনা করে। তাই পয়লা বৈশাখ শুধু পয়লা বৈশাখ নয়। নতুন করে বেঁচে থাকার অঙ্গীকার । আর থাকে বাঙালির মননশীলতার পরিচয় – বর্ষ শেষে পত্রিকার সঙ্গে থাকে একরাশ মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ রঙিন ক্রোড় পত্র ‌। নতুনে নতুনত্বে ভরা নতুন বছর । আশা আকাঙ্খার প্রতীক । বাঙালির রীতি আজকের আন্তর্জাতিক নীতি। ফার্ষ্ট জানুয়ারীতে তো তেমন কিছু নেই । তাই এই নতুন বছরে আমাদের চাওয়া- পাওয়ার কিছু থাকে না । ব্যথা ভরা বর্ষ বিদায় হয় ব্যর্থ হয়ে। পুরানো বছর মনে যেমন রেখাপাত করে না,তেমন নতুন বছরেও কোন আলোর রেখা দেখে পাই না।
পৃথিবী এগোচ্ছে,দেশ এগোচ্ছে কিন্তু আমাদের বঙ্গ কেন পিছিয়ে যাচ্ছে? দুর্নীতি, দুঃশাসন,ব্যক্তি আক্রমণ, ভাষা আক্রমণ, বেকারত্ব যেন অন্ধকার যুগের নৈরাজ্য বিরাজমান। সন্ত্রাসে মধ্যে দিয়ে আমরা কেমন আক্রান্ত হয়ে বেঁচে আছি! বাঙালি আজ পরিচয়হীন, দেশ ছাড়া, ভাষা হারা । কলোনীয়াল পিরিয়ড ইংরেজদের অত্যাচারে আমরা মরি ,ডি-কলোনীয়াল যুগেও ইংরাজী ভাষার জন্যে মরি । ইংরেজ আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলেও ইংরেজি আমাদেরকে ছেড়ে যেতে পারে না। কলোনীয়াল কালচার যেন আমাদের কপাল লিখন। বাঙালির মননশীলতার কোথাও যেন ঘাটতি দেখা দিয়েছে । তাই এতো কলোনীয়াল কালচারের ব্যস্ত । ফার্ষ্ট জানুয়ারী পারে না আমাদের দৈন্যতা দূর করতে। একমাত্র পয়লা বৈশাখ পারে আমাদের মনকে পুষ্ট করতে । আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে পয়লা বৈশাখের জন্যে। তাই তাদের ফার্ষ্ট জানুয়ারীর সঙ্গে আমাদের পয়লা বৈশাখ কখনো মেলে না।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published.