যোগ্য প্রাপককে বঞ্চিত করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে শিক্ষকতার চাকরি যারা করছিলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় প্রমান সাপেক্ষে তাদের সেই চাকরি বাতিল হয়ে গেছে। এরপরই সংবাদে প্রকাশ একেবারেই অবাঞ্ছিত আত্মহত্যার ঘটনা। যে কোনো মৃত্যুই মর্মান্তিক। কিন্তু এটা কেন হবে? যাদের চাকরি বাতিল হয়ে গেছে তাঁরা কি এককভাবে দায়ী? অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে — উভয়েই সম অপরাধী। যাদের চাকরি বাতিল হয়ে গেছে তারা সবাইতো আর পরেশ অধিকারীর মেয়ের পর্যায়ে নেই। হয়তো কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে একটা চাকরি হবে নিশ্চিত আশ্বাস কেউ দেয়ায় সংসারের হাল বাঁচাতে ফাঁদে পড়ে ধার দেনা করে বহু কষ্টে বিপুল অঙ্কের টাকা জোগাড় করে তুলে দিয়ে ছিলেন কালপ্রিট কারো হাতে। শিক্ষিত যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের রাস্তায় নামিয়ে পাওয়া সেই চাকরি আজ যখন বাতিল হয়েছে তখন কেন তাঁরা সেই সব কালপ্রিটদের মুখোশ উন্মোচন করে দিচ্ছেন না? ঘুষ দিয়েছেন প্রমান করতে পারবেন না, তাই? যারা অন্যায় করে তারা শাক দিয়ে কতদিন মাছ ঢাকবেন? আগে তো তারা সমাজের সামনে চিহ্নিত হয়ে যাক। আপনার তো অবৈধ পথে পাওয়া চাকরি বাতিল হয়ে গেছেই। আগামী দিনে যাতে আপনার মতো আরও কাউকে এরা ফাঁসাতে না পারে, কেউ যাতে এদের ফাঁদে না পড়ে সমাজের প্রতি এই দায়ও আপনারই। আত্মহনন কোনো সমাধান নয়, লোকলজ্জা থেকে মুক্তি পেতে এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত কেন নেবেন? একবার ভাবুন, যারা শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা মাথায় নিয়ে কলকাতায় ফুটপাতে কত দিন ধরে পড়ে আছেন শুধু মাত্র ন্যায্য অধিকার হিসেবে প্রাপ্য চাকরি পাওয়ার জন্য, অনাহারে, অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে, পুলিশের লাঠিপেটা খেতে হচ্ছে তাদের তো কোনো দোষ নেই! তাহলে কোন দোষে তাঁরা ফুটপাতে আর ঘটিবাটি বেচেই হোক বা বাবার তেজোরি থেকেই হোক, ঘুর পথে অবৈধ ভাবে চাকরি পেয়ে আপনি নিশ্চিন্তের জীবন কাটাচ্ছেন, এ কেমন ন্যায়! আপনিই তো আপনার স্কুলে ছাত্র ছাত্রীদের সততার শিক্ষা দেবেন, বিবেকে বাধবে না? বাড়িতে সন্তানদের সুশিক্ষা আদৌ দিতে পারবেন? এখন বুঝতে পারছেন সত্য কখনো চাপা থাকে না। আর ঠিক সেই কারণেই আপনার ভেঙে পড়া তো উচিত নয়, আপনাকে যে বা যারা প্রলুব্ধ করে ছিলো যে কোনো মূল্যে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের দেয়ার বিনিময়ে চাকরি দেয়ার, তাদের নাম, পরিচয় সব কিছু আদালতে তুলে দিয়ে আগামী প্রজন্মকে এদের ফাঁদ থেকে বাঁচান। কিন্তু দয়া করে মৃত্যুতে মুক্তি খুঁজবেন না। এটা কোনো সমাধানের পথ নয়। এটা আরো একটা অন্যায়।