সুবল সরদার : কোর্ট মানে সময় । সে শুধু শোনে । শুনে শুনে শুধু সময় দিয়ে যায় । শোনার পরও শোনে। শুনে শুনে কান ব্যথা হয়ে যায় । মলম লাগানোর পরও শোনে। ‘শোনার কোন শেষ নাই, তবুও শোনার কোন খামতি নাই ‘,এটাও সে জানে।
আমাদের কোর্ট আসলে একটা সময় মেসিন । ওই সময় মেসিন থেকে শুধু সময়ের চিরকুট বাহির হয় । সময়ের হাত ধরে এইভাবে চলতেই থাকে। কেসের উৎপত্তি আছে জানি, কিন্তু কবে নিষ্পত্তি কেউ তা জানে না। এ বড় নির্মম ,পরিহাস আমাদের বিচার ব্যাবস্থা।
কত বড় বড় কোর্ট ! কত আইনের মোটা মোটা বই ! শ্যামলা কোট পরা কত জ্ঞানী গুণী উকিল বাবু ! তবুও সময়ের হাতে সে বাঁধা । কেউ তাকে মুক্ত করতে পারে না। যে বিচার ব্যাবস্থা জনগণের সমস্যা শুধু বাড়ায় সে কখনো জনগণের সমস্যার সমাধান করতে পারে ? সময়ের বিচার অসময়ে হয় সে কেমন বিচার ! অন্ধ গনতন্ত্র,খোঁড়া বিচার ব্যাবস্থা এই হচ্ছে আমাদের দুরাবস্থা । মুক্তি কোথায় পাব ?
এরপর আছে পুলিশিরাজ । তারা সরকারি উর্দিধারী মস্তান। তাদের পাহারাধারী ভাবখানা এমন যেন জনগণ সর্বদা চোর, তারাই শুধু সাধু । আসলে তারা জানেই না যে তারা শান্তিরক্ষক । অফিস, আদালত, কোর্ট,কাছারিতে তাদেরকে সামনে থেকে দেখে আঁৎকে উঠি । তারা উর্দিপরা, ডান্ডাধারি, রণংদেহি, সাক্ষাৎ যমমূর্তি । বাঘ- কুমিরের হাত থেকে মুক্তি মিললেও তাদের হাতে মুক্তি মেলে কই ? নেতারা (সবাই নয় কেউ কেউ) মস্তানি করে গণতন্ত্রের নাম করে আর পুলিশ ( সবাই নয়, কেউ কেউ ) মস্তানি করে আইনের নাম করে।
রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা তাদের ন্যায্য ডি এ -এর অধিকার নিয়ে আন্দোলন করলে পুলিশ রাষ্ট্রদ্রোহী আইনে ফাঁসিয়ে দেয় যা পুলিশ কখনো করতে পারে না। পুলিশের অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণ কথা বললে ‘সরকারি কাজে বাধাদান’ হয় বলে পুলিশ মিথ্যা কেসে ফাঁসিয়ে দিতে সিদ্ধ হস্ত হয় । কিন্তু যখন পুলিশ কর্মরত অবস্থায় ঘুষ খায় ? রাস্তায় প্রকাশ্যে হাত বাড়িয়ে পুলিশকে ঘুষ নিতে দেখা যায় ? তখন সরকারি কাজের কথা মনে পড়ে না! আসলে পুলিশের ইচ্ছাই “আইন”। আচ্ছা, তখন কোথায় আইন, কোথায় আমাদের রাষ্ট্র ? প্রবাদ আছে বাঘ ছুঁলে আঠারো ঘা, পুলিশ ছুঁলে ছত্রিশ ঘা, আর কোর্ট ছুঁলে ? অনন্ত ঘা । তাই জনগণের ঘা কখনো শুকায় না । ঘা নিয়ে আমাদের জন্ম আর ঘা নিয়েই আমাদের মৃত্যু । এই ঘা নিয়ে কী সমাস করা যায় ? ঘা র সহিত বর্তমান, না একাধিক ঘা র সমাহার ? এখন বড় দুঃসময় । আমাদের মুমূর্ষু গণতন্ত্র এখন আহত হরিণীর মতো মরনাপন্ন । টেট উত্তীর্ণরা রাস্তায় বসে ধর্ণা দিচ্ছে আর টেট অনুত্তীর্ণরা বহাল তবিয়তে চাকরি করছে । সরকারি কর্মচারীদের ডি এ মৌলিক অধিকার নিয়েও মামলা করতে হচ্ছে । বছরের পর বছর ধরে তাও কোর্টে পেন্ডিং হয়ে আছে । এ কেমন আইন ! এ কেমন গণতন্ত্র ! আমরা এখন কোন রাষ্ট্রে বাস করছি ! ন্যায় নয় অন্যায়, সুনীতি নয় দুর্নীতির পক্ষে এখন রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থা পরিচালিত হচ্ছে । কোর্ট আর সংবিধানের গোলক ধাঁধায় আমরা চোখে সর্ষেফুল দেখছি । আমাদের এখন সাক্ষাৎ সলিল সমাধি । কে বাঁচাবে ?
