‘অবসাদ’ শব্দটির সাথে গ্রাম-বাংলার মা, কাকিমা ও ঠাকুমারা খুব একটা বেশি পরিচিত নয়। তারা অবসাদ বলতে ওই ভীষন ভাবে গুমড়ে থাকাটাকেই বোঝে। আসলে মানব শরীর মানে শুধু রক্ত মাংসের কাঠামো নয়, তাছাড়াও আর একটা প্রধান ভাগ হলো আমাদের মন কিংবা বলা যায় মানসিক স্বাস্থ্য। আমরা শারীরিক রোগ নিয়ে যেমন খুব উৎকণ্ঠিত হয়ে যাই, ডাক্তার-হাসপাতালে ছোটাছুটি করে বেড়াই;ঠিক বিপরীত কাজ করি মানসিক রোগের বেলায়। মানসিক রোগ থার্মোমিটার কিংবা প্রেশার মেশিন দিয়ে মাপা গেলে বোধহয় একে আমরা গুরুত্ব দিতাম। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আপনি সচেতন হওয়া মানেই আপনাকে শুনতে হয় আপনি ‘পাগল’ নয়তো এইসব ‘বড়লোকি ঘোড়ারোগ’। মানসিক রোগ অনেক ধরনের আছে, যার মধ্যে ‘ডিপ্রেশন’ অন্যতম। এই ইংরেজি ‘ডিপ্রেশন’ শব্দটির বাংলা অর্থ হলো ‘বিষন্নতা’ বা ‘অবসাদ’, কিন্তু কেন যেন আমার কাছে অবসাদ শব্দটা এই রোগের ব্যাপকতার তুলনায় অনেক ছোট মনে হয়। অবসাদে থাকা মানুষগুলো নিজের ভেতরে এক সমুদ্র শূন্যতা চেপে রেখে আপনার আমার চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। তারা প্রতিনিয়ত স্বাভাবিক সুন্দর জীবনের অভিনয় করে যায়, কিন্ত এই সুন্দর বর্নিল পৃথিবীতে থেকেও তাদের পৃথিবী ধূসর বর্ণহীন। নিজেকে নিজে বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত হয়ে একসময় তারা ভেঙে পড়ে; কেউ কেউ আবার চিরতরে হারিয়ে যায়। সম্প্রতি মা, কাকিমারা টিভি- সিরিয়াল দেখার ফাঁকে নিউজ চ্যানেলে চোখ রাখলেই দেখছে আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনা ও জল্পনা। যেগুলির কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে অনুমান করছেন, ‘ডিপ্রেশন’। এমন বহু দুর্ঘটনা আমরা চারিপাশ থেকে এবং নিউজ চ্যানেল থেকে শুনে ও দেখে থাকি। কখনও প্রতারণা, প্রেম- বিচ্ছেদ, ক্যারিয়ারের চাপ ইত্যাদি সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে অবসাদে চলে যায় এবং অনেকেই একেবারে হার মেনে নেয়। আসলে মানসিক রোগগুলিকে তো আর বাইরে থেকে দেখা যায় না, তাই কার মধ্যে কী চলছে, সেটি অনুমান করা সহজসাধ্য নয়। তবে যদি কেউ তার সমস্যা আপনার কাছে ব্যক্ত করতে চায় কিংবা যদি কারো আচরণ দেখে বুঝতে পারেন যে, সে হয়তো কোনো সমস্যার মধ্যে আছে, দয়া করে একটু সময় দেবেেন। তাতে একশো শতাংশ মলমের কাজ না হলেও, কিছুটা হলেও মানসিক ভাবে হালকা হয়। আজকের দিনে, আমাদের ব্যস্ত জীবনে এই মূল্যবোধটা জাগরিত হওয়াটা খুবই দরকার।